গোসল কত প্রকার ও কি কি ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
গোসল একটি আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ হলো জল দিয়ে শরীর প্রক্ষালন, অবগাহন,
স্নান ইত্যাদি। মানুষ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকতে ভালোবাসে। গোসল হলো
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার একটি অংশ। যার মাধ্যমে ব্যক্তি
তার নিজের শুদ্ধতা, বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। তাই আজকে আপনাদের জন্য
নিয়ে আসলাম গোসল নিয়ে খুবই গুরত্বপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ একটি আর্টিকেল। যার ফলে গোসল
সম্পর্কিত প্রায় সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আমাদের এই আলোচনায়; তাহলে চলুন
শুরু করা যাক আজকের বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা-
গোসল কত প্রকার ও কি কি ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম |
গোসল কি
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে: ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, গোসল হলো পূর্ণ পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার ও পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর উত্তমরূপে ধৌত করা। ইসলামের কতিপয় ধর্মীয় ইবাদত, উপাসনা এবং আচার-আনুষ্ঠান পালনের পূর্বশর্ত হচ্ছে গোসল; তবে শরীল নাপাক না থাকলে বা গোসল ফরজ না হলে গোসলের প্রয়োজন নেই, শুধু ওযু করে নিলেই হয়।বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে: গোসল হলো শরীর বা ত্বক পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে নিজের দেহকে জল বা অন্য কোনো তরলে নিমজ্জিত করার প্রক্রিয়া। গোসলের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা লাভ, শারীরিক সুস্বাস্থ্য, মানসিক প্রশান্তি, ত্বকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ঘুমের উন্নতি সহ আরও নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়।
গোসল কাকে বলে
শরিয়তের পরিভাষায়, পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দিয়ে পুরো শরীর ধোয়াকে গোসল বলা হয়।গোসল কত প্রকার ও কি কি
ইসলাম ধর্মানুসারে গোসল ৪ প্রকার। যথা: ১) ফরজ গোসল; ২) ওয়াজিব গোসল; ৩) সুন্নত গোসল; ও ৪) মুস্তাহাব গোসল।ফরজ গোসল কাকে বলে
বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে মানুষ অপবিত্র বা নাপাক হয়ে যায়। আর এমতাবস্থায় যে গোসলের মাধ্যমে মানুষ তার নাপাকি থেকে মুক্তি লাভ করে এবং পাক পবিত্র হয় তাকে ফরজ গোসল বলে।গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
যে সকল কারণে গোসল ফরজ হয় সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-- বীর্য নির্গত হলে।
- স্বপ্নদোষ হলে।
- স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে।
- নারীদের হায়েয বন্ধ হলে।
- নারীদের নেফাস বন্ধ হলে।
- কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে।
- এছাড়া মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য ফরজ
গোসলের ফরজ কয়টি
গোসলের ফরজ হলো ৩টি। যথা: ১) ৩বার গড়গড়িয়ে কুলি করা; ২) ৩বার নাকের নরম জায়গায় পানি দেওয়া; ৩) সারা শরীর উত্তম রূপে ধৌত করা যেন দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। আর এই তিনটি ফরজ কাজ করার মাধ্যমে ফরজ গোসল সম্পূর্ণ করতে হয়। যথাযথভাবে এই ৩টি কাজ আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না।ফরজ গোসলের নিয়ম
ইতোমধ্যেই ফরজ গোসলের তিনটি নিয়ম আপনারা জেনে গেছেন, কিন্তু এই তিন নিয়ম সহ ফরজ গোসল করার সর্বোত্তম নিয়ম রয়েছে। সেগুলো হলো-- সর্বপ্রথম গোসলের নিয়ত করা।
- গোসল শুরু করার পূ্র্বে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলা। কিন্তু যদি টয়লেট ও গোসলখানা একইসঙ্গে থাকে তাহলে ‘বিসমিল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করে না বলে মনে মনে বলতে হবে।
- হাত ধৌত করা: উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত উত্তম রূপে ধোয়া।
- লজ্জাস্থান ধৌত করা: ডান হাতের সাহায্যে বাম হাতে পানি নিয়ে উক্ত পানি দ্বারা লজ্জাস্থান ধুয়ে পরিষ্কার করা। আরও ভালো হয় যদি ইস্তিঞ্জা তথা প্রস্রাব করে নেওয়া যায়; এতে করে প্রস্রাবের রাস্তায় নাপাকি অবশিষ্ট থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।
- নাপাকি ধৌত করা: শরীর ও কাপড়ের কোনো যায়গায় নাপাকি লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করা। এক্ষেত্রেও ডান হাতের সাহায্যে বাম হাতে পানি নিয়ে উক্ত নাপাকি ধৌত করা।
- ওজু করে নেওয়া: পা বাদ রেখে নামাজের ওজুর মতো করে, ওজু করে নেওয়া।
-
গোসলের ৩টি ফরজ আদায় করা: উপরের কাজ গুলো শেষ করা হলে গোসলের এই
পর্যায়ে গোসলের যে তিনটি ফরজ কাজ রয়েছে সেগুলো আদায় করা। অর্থাৎ-
- ৩বার গড়গড়িয়ে কুলি করা
- ৩বার নাকের নরম জায়গায় পানি দেওয়া
- সারা শরীর উত্তম রূপে ধৌত করা যেন দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে; (শরীরে পানি ঢালার সময় ডান পাশ থেকে পানি ঢালা শুরু করা উত্তম)।
- পা ধৌত করা: সবশেষে গোসলের স্থান থেকে সরে এসে উভয় পা ভালো করে ধুয়ে নেয়া।
ফরজ গোসল না করলে কি কি শাস্তি হয়
পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এখানে পবিত্রতা বলতে জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে। যেমন— গোসল, অজু, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখতে মেসওয়াক করা, শরীরে ময়লা লাগলে ধুয়ে ফেলা ইত্যাদি। শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সামাজিক জীবনেও পবিত্রতা অর্জনের দিকে লক্ষ্য রাখতে ইসলাম নির্দেশ দেয়।ফরজ গোসলের দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের তাগীদ দিয়ে আল্লাহ বলেন:
"যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। [সূরা মায়েদাহ: ৬]।"
যেখানে আল্লাহ তায়ালা নিজে কোরআনে ফরজ গোসলের নির্দেশ দিয়েছেন সেহেতু এটি অমান্য করলে শাস্তি নির্ধারিত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে একটি শাস্তির নাজির বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক প্রতিবেশীর জানাযাতে যোগদান করি। তার লাশ কবরে নামানোর সময় বিড়ালের ন্যায় একটি অদ্ভুত জানোয়ার কবরের ভিতরে বাইরে লম্বঝম্প করে লাশ কবরে নামাতে বাধার সৃষ্টি করতে লাগল। সেটিকে তাড়াবার জন্য সকলে মিলে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন প্রকারই দুর করা গেল না। ব্যর্থ হয়ে অন্যত্র গিয়ে কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়ে জন্তুটি ভয়ানক উৎপাত করতে লাগল। সেটিকে মারতে গিয়েও সর্ব প্রকার চেষ্টা ব্যর্থ হল। অগত্য বাধ্য, হয়ে অন্যত্র গিয়ে তৃতীয় কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়েও জন্তুটি আরও বেশী উপদ্রব শুরু করল। অনন্যোপায় হয়ে আমরা তাড়াতাড়ি তৃতীয় কবরেই তাকে দাফন করে সভয়ে দ্রুতপদে সেখানে হতে প্রস্থান করলাম। দফনান্তে কবর হতে বজ্রবৎ ভীষণ এক আওয়াজ বের হয়েছিল। আমি জানার জন্য তার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তার স্ত্রী উত্তর দিল, সহবাসের পর তিনি ফরয গোসল অবহেলা করতেন। এতে তার ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যেত। এছাড়া তার অন্য কোন পাপ আমি কখনো দেখি নাই।
ফরজ গোসলের দোয়া
ফরজ গোসলের দোয়ার আরবিতে:نَوَيْتُ الْغُسُلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَتِهِফরজ গোসলের দোয়ার বাংলা উচ্চারণ:“নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।”
ফরজ গোসলের দোয়ার বাংলা অর্থ:“আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।”
গোসলের উপকারিতা
পবিত্রতা হলো ঈমানের অঙ্গ আর একারনেই মানুষ অপবিত্র বা নাপাক হয়ে গেলে গোসল করার মাধ্যমে পবিত্র হয়! শুধু পবিত্রতা অর্জনের জন্য নয় গোসলের রয়েছে অনেক রকমের উপকারিতা; সেগুলো হলো:- পবিত্রতা অর্জিত হয়।
- শারীরিক সুস্বতা পাওয়া যায়।
- শরীর বা ত্বক পরিষ্কার থাক।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা লাভ করা যায়।
- মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।
- ত্বকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- শারীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- ঘুমের উন্নতি হয়।
- মন-মানসিকতা ভালো থাকে।
- পড়াশোনায় মন বসে।
- কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া যায়।
- এছাড়াও নিয়মিত গোসলের মাধ্যমে আরও নানা রকম উপকারিতা পাওয়া যায়।
মেয়েদের কি কি কারণে ফরজ গোসল করতে হয়?
মেয়েদের যে সকল কারণে গোসল ফরজ হয় সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-- যোনী থেকে বীর্য/কামরস নির্গত হলে।
- স্বপ্নদোষ হলে।
- স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে।
- হায়েয বন্ধ হলে।
- নেফাস বন্ধ হলে।
পুরুষের কি কি কারণে ফরজ গোসল করতে হয়?
পুরুষের যে সকল কারণে গোসল ফরজ হয় সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-- পুরুষাঙ্গ থেকে বীর্য নির্গত হলে।
- স্বপ্নদোষ হয়ে বীর্য নির্গত হলে।
- স্ত্রী-এর সাথে সহবাস করলে।
ফরজ গোসল সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
ইনসাইট অ্যান্ড ওন্দার্সের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url